জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার লেখ। জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ।


জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার লেখ। জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ।


জীবাশ্ম জ্বালানি


জীবাশ্ম জ্বালানি হলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহৃত জ্বালানি, যা মূলত পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, এবং কয়লা নিয়ে গঠিত। এই জ্বালানির ব্যবহার মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষ করে শিল্পবিপ্লবের পর। জীবাশ্ম জ্বালানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভিত্তি স্থাপন করেছে, কিন্তু এর ব্যবহারের সাথে সাথে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা এবং প্রভাবও দেখা দিয়েছে।


জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকারভেদ:

জীবাশ্ম জ্বালানি প্রধানত তিনটি প্রকারের:


১.কয়লা: এটি পৃথিবীর মধ্যে পাওয়া সবচেয়ে পুরনো জ্বালানি। শিল্প বিপ্লবের সময় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি শক্তিশালী শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এটি সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে।


২.তেল: এটি আধুনিক শিল্প ও পরিবহন ব্যবস্থায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। গাড়ি, প্লেন, এবং জাহাজের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তেলের ব্যবহার পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জলস্তরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।


৩.প্রাকৃতিক গ্যাস: এটি সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে পরিচিত। এটি গৃহস্থালিতে রান্না এবং তাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া মিথেন গ্যাসের নির্গমনের কারণে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।


জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার:

জীবাশ্ম জ্বালানি প্রধানত বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন চলাচল, গরম করার সিস্টেম, এবং শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। যানবাহন চালাতে পেট্রোল এবং ডিজেল মূলত ব্যবহৃত হয়, যা দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া, বিভিন্ন শিল্পে পেট্রোকেমিক্যালসের মাধ্যমে প্লাস্টিক, রাসায়নিক, এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদিত হয়।


জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সুবিধা:

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কিছু সুবিধা রয়েছে:


১.উচ্চ শক্তি ঘনত্ব: জীবাশ্ম জ্বালানি উচ্চ শক্তি ঘনত্বের জন্য পরিচিত, যা কম পরিমাণে অধিক শক্তি উৎপাদনে সক্ষম।


২.অর্থনৈতিক উন্নয়ন: জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, কারণ এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং শিল্পায়নকে উৎসাহিত করে।


৩.প্রযুক্তিগত উন্নতি: জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদান রাখে, যেমন রিফাইনারি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তিতে উন্নতি।


জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং পরিবেশগত প্রভাব:

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবগুলি গুরুতর:

১.পরিবেশগত প্রভাব

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিবেশের উপর বিপজ্জনক প্রভাব ফেলেছে। এই জ্বালানির দহন প্রক্রিয়া কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাস মুক্তি করে, যা গ্রীণহাউস গ্যাস হিসেবে পরিচিত। এসব গ্যাস গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন বন্যা, খরা, ও প্রাণীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিবর্তন ঘটছে।


২.স্বাস্থ্যগত প্রভাব

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উদ্ভূত দূষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ও দূষণ মানুষের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ু দূষণ একাধিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং এ কারণে অনেক মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।


৩.জলবায়ু পরিবর্তন: জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গত গ্যাস, বিশেষত কার্বন ডাই অক্সাইড, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। এটি পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।


২.দূষণ: জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে বিভিন্ন প্রকার দূষিত কণার জন্ম হয়, যা

শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।


৩.জলদূষণ: জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন এবং পরিবহন প্রক্রিয়ায় জলাশয়ে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পদার্থ প্রবাহিত হয়, যা জলবায়ুর স্বাভাবিক ভারসাম্যকে নষ্ট করে।


৪.ভূ-পরিবেশের পরিবর্তন: জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের জন্য প্রচুর পরিমাণে জমি ব্যবহার করা হয়, যা বন্যপ্রাণী এবং তাদের আবাসস্থলকে বিপর্যস্ত করে।


টেকসই বিকল্পের প্রয়োজনীয়তা:

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। এর জন্য কিছু টেকসই বিকল্প গঠন করতে হবে:


নবায়নযোগ্য শক্তি: সূর্য, বায়ু, এবং জল শক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস তৈরি করা সম্ভব।


বিদ্যুৎযানের বিকল্প: বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে তেলের উপর নির্ভরতা কমানো যেতে পারে।


এনার্জি কার্যকরী প্রযুক্তি: বিদ্যুৎ এবং তাপের ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রযুক্তি উন্নয়ন করে শক্তি সঞ্চয় বৃদ্ধি করা সম্ভব।


বৈশ্বিক সহযোগিতা: বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির বিকাশ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো সম্ভব।


উপসংহার:

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আমাদের সভ্যতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি প্রদান করেছে, কিন্তু এর সাথে যুক্ত পরিবেশগত সমস্যা অগ্রাধিকারের বিষয়। আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই পরিবর্তনগুলি দীর্ঘমেয়াদে আমাদের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং নিরাপদ পৃথিবী নিশ্চিত করবে।


•MCQ প্রশ্ন উত্তর:


১) জীবাশ্ম জ্বালানি মূলত কি থেকে গঠিত হয়?

ক.)মাটি

খ)মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ

গ)জৈব সার

ঘ)বৃষ্টির জল

উত্তর:(খ)মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ


২) নিচের কোনটি জীবাশ্ম জ্বালানি নয়?

ক)কয়লা

খ)প্রাকৃতিক গ্যাস

গ)পেট্রোল

ঘ)সৌরশক্তি

উত্তর:(ঘ)সৌরশক্তি


৩)জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ-

ক) হাইড্রোজেন

খ)সৌরশক্তি

গ)প্রাকৃতিক গ্যাস

ঘ) বায়ুশক্তি

উত্তর:(গ)প্রাকৃতিক গ্যাস


৪)জীবাশ্ম জ্বালানি কত বছর ধরে তৈরি হয়?

ক) কয়েক বছর

খ) শত বছর

গ) হাজার বছর

ঘ) কোটি কোটি বছর

উত্তর:(ঘ) কোটি কোটি বছর


৫)জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়লে কি নির্গত হয়?

ক) অক্সিজেন

খ) কার্বন ডাই অক্সাইড

গ) হিলিয়াম

ঘ)নাইট্রোজেন

উত্তর:(খ) কার্বন ডাই অক্সাইড


৬)জীবাশ্ম জ্বালানির প্রধান ব্যবহার কোথায়?

ক) রান্না

খ)যানবাহনে জ্বালানি

গ)খেলাধুলা

ঘ) শিল্পে কাপড় রঙ করা

উত্তর:(খ)যানবাহনে জ্বালানি


৭)জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়লে পরিবেশে কী ক্ষতি হয়?

ক) বায়ু বিশুদ্ধ হয়

খ) গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ে

গ) গাছ বাড়ে

ঘ) মাটির উর্বরতা বাড়ে

উত্তর:(খ) গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ে


৮)জীবাশ্ম জ্বালানি নবায়নযোগ্য নাকি অনবায়নযোগ্য?

ক) নবায়নযোগ্য

খ) অনবায়নযোগ্য

গ) দুটোই

ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর:(খ) অনবায়নযোগ্য


৯)জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের সময় কোনটি ঘটে?

ক) ভূমিকম্প

খ) পরিবেশ দূষণ

গ) বজ্রপাত

ঘ) জলবায়ু পরিবর্তন থেমে যায়

উত্তর:(খ) পরিবেশ দূষণ


১০)পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি কোনটি?

ক)সৌরশক্তি

খ) কয়লা

গ) বায়ুশক্তি

ঘ) জলবিদ্যুৎ

উত্তর:(খ) কয়লা


১১)কয়লা ব্যবহারে কোন ধরণের দূষণ ঘটে?

ক) শব্দ দূষণ

খ) বায়ু দূষণ

গ)জল দূষণ

ঘ)আলো দূষণ

উত্তর:(খ) বায়ু দূষণ


১২)পেট্রোলিয়াম থেকে কী তৈরি হয়?

ক) কয়লা

খ)প্রাকৃতিক গ্যাস

গ) ডিজেল

ঘ) সৌর শক্তি

উত্তর:(গ) ডিজেল


১৩)জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে কোন শক্তি ব্যবহার করা ভালো?

ক) বায়ুশক্তি

খ) প্লাস্টিক

গ) কয়লা

ঘ) কাঠ

উত্তর:(ক) বায়ুশক্তি



•অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর:


১)জীবাশ্ম জ্বালানি কী?

উত্তর: মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ থেকে কোটি বছর ধরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক জ্বালানিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।


২)জীবাশ্ম জ্বালানির তিনটি উদাহরণ দাও।

উত্তর:কয়লা,পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস।


৩)প্রাকৃতিক গ্যাস কীভাবে তৈরি হয়?

 উত্তর: মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী গভীর ভূগর্ভে চাপ ও তাপে পরিণত হয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।


৪)কয়লার প্রধান উপাদান কী?

উত্তর: কার্বন।


৫)জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশে কী ক্ষতি করে?

উত্তর: বায়ু দূষণ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটায়।


৬)জীবাশ্ম জ্বালানি কী নবায়নযোগ্য? 

উত্তর: না, এটি অনবায়নযোগ্য।


৭)পেট্রোল কী থেকে তৈরি হয়?

 উত্তর: পেট্রোলিয়াম থেকে।


৮) ডিজেল কোথায় ব্যবহৃত হয়?

 উত্তর: যানবাহন ও শিল্পে।


৯)জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প কী হতে পারে?

উত্তর:সৌরশক্তি,বায়ুশক্তি,জলবিদ্যুৎ।


১০)জীবাশ্ম জ্বালানি কবে শেষ হতে পারে?

উত্তর:আগামী শতকে অনেক জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পদ ফুরিয়ে যেতে পারে।


১১)কয়লা কোথায় বেশি ব্যবহৃত হয়?

 উত্তর: বিদ্যুৎ উৎপাদনে।


১২)জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের একটি সমস্যা কী?

উত্তর: ভূগর্ভ ধস বা পরিবেশ দূষণ।


১৩)কোন জীবাশ্ম জ্বালানি গ্যাসীয় রূপে থাকে?

উত্তর: প্রাকৃতিক গ্যাস।


১৪)আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি রক্ষা করার উপায় কী?

উত্তর: নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার এবং অপচয় কমানো।


Contents:

আরো পড়ুন:


ভরদুপুরে কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

শংকর সেনাপতি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here

মন-ভালো-করা কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here

পশু পাখির ভাষা গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

ঘাসফড়িং কবিতা প্রশ্ন উত্তর Click Here

কুমোরে-পোকা বাসাবাড়ি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

চিঠি কবিতার প্রশ্ন উত্তর Click Here


মরশুমের দিনে গল্পের প্রশ্ন উত্তর Click Here

মাটির ঘরের দেওয়াল চিত্র প্রশ্ন উত্তর click Here 

পিঁপড়ে কবিতার প্রশ্ন উত্তর click Here 

ফাঁকি গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here 

আশীর্বাদ গল্পের প্রশ্ন উত্তর click Here 



Class 6 English


It all began with drip drip part 1 Click Here

It all began with drip drip part 2 Click Here

It all began with drip drip part3 Click Here

 

the adventurous clown part 1 Click Here

the adventurous clown Part 2 Click Here

the adventurous clown part 3 Click Here


The rainbow poem Lesson 3 part 1 Click Here


The Shop That Never Was Lesson 4 Part-1 Click Here




ষষ্ঠ শ্রেণির পরিবেশ ও বিজ্ঞান 


জীবাশ্ম জ্বালানির প্রশ্ন উত্তর click here 












Post a Comment

0 Comments